লক্ষ্মীপুর থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সাংসদ শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুলের সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। আজ সোমবার তাঁর আসন শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে জাতীয় সংসদ সচিবালয়।
জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাফর আহমেদ খানের সই করা গেজেটে বলা হয়, কুয়েতের ফৌজদারি আদালতে ঘোষিত রায়ে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে চার বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন লক্ষ্মীপুর-২ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম। এ কারণে বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য নন তিনি। সে কারণে সংবিধানের ৬৭(১(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রায় ঘোষণার তারিখ (গত ২৮ জানুয়ারি) থেকে তাঁর আসন শূন্য হয়েছে।
এর আগে কুয়েতের আদালতে সাংসদ মো. শহিদ ইসলামের সাজা হওয়ার বিষয়টি চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস।
মানব ও মুদ্রা পাচারের মামলায় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ মো. শহিদ ইসলামকে গত ২৮ জানুয়ারি সাজা দেন কুয়েতের ফৌজদারি আদালত। বিচারক রায়ে এই সাংসদকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার বা ৫৩ কোটি ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো সাংসদ বিদেশের মাটিতে ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম। গত বছরের ৬ জুন রাতে কুয়েতের বাসা থেকে আটক করা হয় শহিদকে। আটকের সাড়ে সাত মাস আর বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর সাড়ে তিন মাসের মাথায় দণ্ডিত হন তিনি।
কুয়েতে মানব পাচার ও ভিসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল টাকার মালিক হন শহিদ ইসলাম। টাকার জোরে স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনের সাংসদ বানান তিনি। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় লক্ষ্মীপুরে অনেকটা প্রকাশ্য আলোচনা ছিল যে ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নোমানকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেন শহিদ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও নির্বাচনের আগেই অনেকটা জয় নিশ্চিত করে ফেলেন। এই দম্পতির সাংসদ হওয়ার প্রক্রিয়ায় অর্ধশত কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে বলে প্রচার আছে।
কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দেশেও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের পৃথক দুই মামলায় সাংসদ শহিদসহ ৬ জনের ৬৭০টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার আদালত। মানব পাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে শহিদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর মামলা করে সিআইডি। আসামিদের মধ্যে তাঁর মেয়ে, ভাই ও শ্যালিকাও রয়েছেন। এর আগে ১১ নভেম্বর মানব পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে শহিদ ও তাঁর স্ত্রী সেলিনার বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
?️সূত্র, প্রথম আলো